সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: হাওর রক্ষা বেরী বাঁধের টাকা নিয়ে লুটপাট চলছে। কাজ না করেই মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ এর পায়তারা করছেন চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপির চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আরশ মিয়া। তিনি ৬৫ লাখ টাকা বাগিয়ে নিয়ে তার নিজ নামীয় ১টি পিআইসি ও তার আপন ভাগিনা ও ভাতিজাসহ ঘনিষ্ট আত্মীয়দের নিয়ে ৪টি পিআইসি গঠনের মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দ ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। বাকী টাকাও উত্তোলন করে পকেটস্থ করার পায়তারা করছেন। কিন্তু তার বরাদ্দকৃত বাঁধের অধিকাংশ স্থানে মাটি ফেলেন নি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন হাওর এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে ফোল্ডার-১ ইসমাইল চক হতে বড় ডহর পর্যন্ত বাধে দায়সারাভাবে নামমাত্র এক থেকে দেড় ফুট মাটি ফেলা হয়েছে। অন্য দিকে নলুয়ার হাওড়ের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের বেরী গ্রামের জামে মসজিদ থেকে গোপরাপুর বাজার পর্যন্ত ৩০০ মিটার হাওড় রক্ষা বেরী বাঁধের অধিকাংশ স্থানে এখনও মাটি ফেলা হয়নি। এই বাঁধ নির্মানে ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখানেও দায়সারা ভাবে কিছু অংশে সামান্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। এই বেরী বাধের কাজ না হওয়ায় নলুয়া ও মই হাওরের কাচা ও আধা পাকা প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসল ঝুকির মধ্যে রয়েছে। অন্য দিকে কুশিয়ারা নদীর পাড়ের রানীগঞ্জ বাগময়না সড়কে কোন বেরী বাঁধ না হওয়ায় মই ও নলুয়ার হাওড় ঝুকির মধ্যে রয়েছে।
বাগময়না গ্রামের কৃষক ছালেহ আহমদ জানান, কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনে মই হাওর পাড়ের এ বাঁধটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু এবার এখানে বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে হাওড় তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। অন্য দিকে বেরী গ্রামের কৃষক ফখরুল ইসলাম বলেন, আমোদের গ্রামের বেরী জামে মসজিদ থেকে গোপরাপুর বাজার পর্যন্ত ৩০০ মিটার হাওড় রক্ষা বাধের জন্য ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে প্রায় ৫০ মিটার জায়গায় দায়সারা ভাবে কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। বড়জোর ৫০ হাজার টাকার মাটি ফেলা হয়েছে। এ বাধেঁর পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন চেয়ারম্যান আরশ মিয়ার আপন ভাগিনা মিলন মিয়া তারা কাজ না করে টাকা আত্মসাতের পায়তারা করছেন। এখানে বেরীবাঁধ না হওয়ায় নলুয়া হাওরের কাচা ও আধাপাকা ফসল ঝুকির মধ্যে আছে।
স্থানীয় কৃষক শাহজাহান বলেন, উপযুক্ত বেরী বাধ না হওয়ায় আমরা চিন্তার মধ্যে আছি। বেরী গ্রামের অর্ধশতাদিক কৃষক বেরী বাঁধ না করে ইউপি চেয়ারম্যান আরশ মিয়া সরকারি বরাদ্দকৃত মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে দাখিল করেছেন। হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বকুল বলেন, চেয়ারম্যান আরশ মিয়া ও তার আত্মীয় স্বজনরা বেরী বাঁধের কাজ না করে বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করে নিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানূগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
‘‘হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও’’ আন্দোলনের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবারও যারা বেরী বাঁধ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে সরকারি টাকা লুটপাট করেছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি, তিনি বলেন আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বৈশাখের ৫/৭ তারিখের মধ্যে ধান কাটার ধুম পড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু এলাকায় ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। কেউ কেউ শিলা বৃষ্টি ও অকাল বন্যার আশংকায় আধাপাকা ধানও কাটতে শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরশ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে, তিনি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বেরীবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউএনও মাসুম বিল্লাহর সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, চেয়ারম্যান আরশ মিয়ার বিরুদ্ধে ১টি অভিযোগপত্র পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন এর সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না হলে আমরা অভিযুক্তদের বিল দেব না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Leave a Reply